কুতুবদিয়ায় বায়ুবিদ্যুৎ এখনো আশার অালো!

  • উপকূল থেকে উপকূল
  • কুতুবদিয়ায় বায়ুবিদ্যুৎ এখনো আশার অালো!

    রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
    বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
    ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
    ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
    Decrease fontEnlarge font
    কিরণপাড়া, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার ঘুরে এসে: বহুমূখী সংকটের মধ্যেও আশা জাগাচ্ছে 
    কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। বঙ্গোপসাগরের তীরে ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা 
    এ প্রকল্পটি বিভিন্ন প্রতিকূলতায় বার বার হোঁচট খাচ্ছে। ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বাঁধ। তা আবার 
    মেরামত করা হচ্ছে। চলছে ভাঙ্গন রোধে নানান চেষ্টা। বর্তমানে চলছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ।
     সঙ্গে বায়ুবিদ্যু‍ৎ প্রকল্পের মেরামতের কাজও চলছে। কুতুবদিয়ার মানুষ আবারো স্বপ্ন দেখছে
     বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হওয়ার।

    কুতুবদিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে সমুদ্রের
     গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের পাখাগুলো। প্রকল্পের উত্তর দিক কিরণপাড়া কিংবা আরো 
    দূর থেকেই এই পাখাগুলো চোখে পড়ে। কিন্তু এগুলোর যে কী দুরবস্থা, কাছে না গেলে তা বোঝার 
    কোনো উপায় নেই। বেশিরভাগ পাখার অবস্থা খারাপ। সচল আছে মাত্র কয়েকটি।
     
    সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রের কিনারে ভাঙ্গন কবলিত বাঁধের ভেতরের অংশে বায়ুবিদ্যুৎ
     প্রকল্পের একটি একতলা ভবন দাঁড়িয়ে আছে। বায়ুবিদ্যুতের পাখাগুলো চালানো ছাড়া এখানে বিশেষ 
    কোনো কার্যক্রম নেই। ভবনটির আশপাশে পাখা মেরামতের কাজ চোখে পড়ে। খানিক দূরে চলছিল 
    বাঁধ মেরামতের কাজ।

    স্থানীয়রা জানান, সমুদ্র থেকে আসা পানির প্রবল চাপ থাকার কারণে এই এলাকার বাঁধ বারবার 
    ভেঙ্গে যায়। এর ফলে বায়ুবিদ্যু‍ৎ প্রকল্পটিও বার বার হুমকির মুখে পড়ে। বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের পাখা 
    ও বাঁধ এ পর্যন্ত অনেকবার সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিতভাবে
     বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

    বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মী বাংলানিউজকে জানালেন, ভাঙ্গন এবং বেশ কয়েকটি পাখা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন বিদ্যু‍ৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে পুরাদমে মেরামত কাজ চলছে। অচিরেই আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হবে।

    সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রকৌশলী ফজলুর রহমানের তত্বাবধানে ২০০৭ সালে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে স্থাপিত হয় এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ কিলোওয়াট। ৫০টি পিলার সদৃশ্য পাখা রয়েছে। বাতাসে এগুলো ঘুরানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

    কিরণপাড়ার মোহাম্মদ আলী বলেন, এই বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলের মানুষ
     আগামীদিনে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে
     দৈনিক ছয় ঘণ্টা করে বিদ্যুত সরবরাহ করা হত। কিন্তু যন্ত্রপাতি যথোপযুক্ত মানসম্মত না হওয়ায়
     ওই বছর থেকে বিদ্যুত উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হওয়ার পর বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে
     থাকা দ্বীপ কুতুবদিয়াকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল এখানকার মানুষ। কিন্তু
     দুর্বল ও নিচু বেড়িবাঁধ অল্প সময়ের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এলাকায় সেই পরিবেশ থাকছে না। 
    বাঁধ মেরামত কাজ কখনো শেষ হয়, কখনো কাজের মান থাকে অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে বায়ু বিদ্যুৎ
     প্রকল্পটি সব সময়ই ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়।

    তবুও আশা জেগে আছে কুতুবদিয়াবাসীর। বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এবং বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের 
    পাখাগুলো সংস্কার করা হলে আবারো বিদ্যুৎ সরবরাব শুরু হবে বলে আশাবাদ কুতুবদিয়ার মানুষের।

    যোগাযোগ সমস্যার কারণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা দ্বীপ কুতুবদিয়া বহুমূখী সংকটে রয়েছে। 
    তার ওপর বিদ্যুতের অভাব এখানকার মানুষদের আরো পিছিয়ে রাখছে। দ্বীপকে আলোকিত করতে 
    এখন ভরসা সৌরবিদ্যুৎ আর জেনারেটর। জেনারেটর চালানোর সাধ্য যাদের নেই, তাদের সব কাজ 
    সারতে হয় সৌরবিদ্যুতের আবছা আলোতে। সেই আলোর রশ্মি আরো একটু বাড়িয়ে দিতে পারে নতুন 
    করে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর এই উদ্যোগ।
       

    Techvoice template ad banner
    Related Posts
    Previous
    « Prev Post