মেসির গোলের পেছনে নিউটন তত্ত্ব

মেসির গোলের পেছনে নিউটন তত্ত্ব
স্যার আইজ্যাক নিউটন বেঁচে থাকলে হয়তো ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারতেন। কারণ নিজেদের অজান্তেই লিওনেল মেসি এবং আন্দ্রে পিরলোরা গোল করার ক্ষেত্রে তার সূত্রের প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন। অন্তত এই বিশ্বকাপে মেসির অসামান্য গোলগুলো পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কীভাবে? জানতে হলে আপনাকে 'ম্যাগনাস ইফেক্ট' বুঝতে হবে। ভয় পাবেন না এটা অ্যারোডাইমিক্সের মতো জটিল কোনো তত্ত্ব নয়। এটা স্রেফ স্পিন আর বাতাসের কারসাজি। এ ব্যাপারটাই এখন ব্যাখ্যা করা যাক।
ফুটবলে সোয়ার্ভ যতটা পরিচিত টার্ম, 'ম্যাগনাস ইফেক্ট' ততটাই অপরিচিত। বলে শট মারার সময় যে পরিমাণ স্পিন তাতে মেশে, এটাই মারাত্মক করে দেয় 'ম্যাগনাস ইফেক্ট'। প্রথমে এই ইফেক্ট কী, তা বুঝে নেওয়া যাক। শট মারার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে বল তীব্র বেগে ঘুরতে থাকে। বলের এভাবে স্পিন করে এগিয়ে যাওয়া গতিপথের উল্টোদিক থেকে আসা বাতাসের ধাক্কায় পাল্টে যেতে থাকে বলের গতিপথ। ব্রাজুকার মতো বল গতি বদল করে বেশি। কারণ এই বলের উপরিভাগের প্যানেল এবং সেলাই আগের বিশ্বকাপের 'জাবুলানি' বলের তুলনায় বেশ কিছুটা 'রাফ'। ফলে ক্রমেই তা বদলে দিতে থাকে বলের অন্তিম গন্তব্য। এর সঙ্গে 'ভিজ্যুয়াল ইলিউশন' মিলিয়ে ব্যাপারটা মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। এই ভিজ্যুয়াল ইলিউশনের কারণে গোলকিপার বলের আসল গতিপথ থেকে ভিন্ন পথে বলটিকে আসতে দেখেন। ফলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। মেসি কিংবা পিরলোদের অসামান্য গোলের এটাই কারণ। পজিটিভ ম্যাগনাস ইফেক্টে ডান পায়ের ইনস্টেপে মারা শট যায় ডান দিক থেকে বাঁ দিকে আর বাঁ-পায়ের ইনস্টেপে তা যায় বাঁ দিক থেকে ডান দিকে। একইভাবে আউটস্টেপের শটের ক্ষেত্রে তা 'রিভার্স' হয়ে যায়। শটের গতি বাড়তে থাকলে এবং বলের স্পিন বদলে যেতে থাকলে গন্তব্যও অবিশ্বাস্যভাবে বদলে যায়। এমআইটির অ্যাপ্লাইয়েড ম্যাথমেটিক্সের প্রফেসর জন বুশ তার সাম্প্রতিকতম গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন 'ম্যাগনাস ইফেক্টের' এয়ারোডাইনামিক্স মেনে কীভাবে বদলে যায় ফুটবলের গতিপথ। বল যত মসৃণ হয়, তত স্বাভাবিক গতিপথের উল্টো দিকে যায় বল। যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করা গিয়েছিল ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নেওয়া রবার্তো কার্লোসের সেই বিখ্যাত ফ্রি-কিকে। যেখানে ফরাসি গোলকিপার ফাবিয়ান বার্থেজকে হতবাক করে দিয়ে বাইরে যেতে যেতে বলটি হঠাৎ পথ বদল করে গোলে ঢুকে গিয়েছিল। এটা জানার পর কি আপনার কাছে মেসির কৃতিত্ব কমে গেল। এটা ভাবলে আপনি ভুল ভাবছেন। ওভাবে ফ্রি-কিক নেওয়ার জন্য রীতিমতো অনুশীলন এবং অধ্যবসায়ের পরিচয় দিতে হয়। পোস্ট থেকে দূরত্ব বুঝে শটে গতি ও স্পিনের সংখ্যা বাড়িয়ে-কমিয়ে যে নিয়ন্ত্রণে শট মারেন মেসিরা 'ম্যাগনাস ইফেক্টের' আসল কারণ এটাই। 'ম্যাগনাস ইফেক্ট' আবিষ্কার করেছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। ফুটবল মাঠে যার সার্থক প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন মেসিরা। ৩২ বছর পর আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসির করা ফ্রি-কিকের গোল এই 'ম্যাগনাস ইফেক্টের' ফসল। বিশ্বকাপে যত দিন যাবে ফ্রি-কিকে আমরা আরও অলৌকিক গোল দেখতে পাব।

Techvoice template ad banner
Related Posts
Previous
« Prev Post