কুতুবদিয়ায় সংঘর্ষ তাণ্ডব পুলিশের গুলিতে নিহত ৪ ।। গাড়ি ও দোকানে আগুন ভাঙচুর, আহত অর্ধশতাধিক, কাল বৃহত্তর চট্টগ্রামে হরতাল
চকরিয়া প্রতিনিধি ॥
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের সাথে বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ৪ জন। আহত হয়েছে ৯ পুলিশ ও সংবাদকর্মীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ১৮ দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের জিপসহ পাঁচটি যানবাহন ও দুটি দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছে। আরো ২০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দল। নিহতরা হলেন উপজেলার লেমশীখালীর আজিজুর রহমান (২০), উত্তর ধুরুংয়ের আবু আহমেদ (৫৫), দক্ষিণ ধুরুংয়ের মোহাম্মদ পারভেজ (২৪) এবং দক্ষিণ ধুরুংয়ের মুছাপাড়ার আবু বকরের ছেলে মো.ইসমাইল (২২)। কক্সবাজার জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি দিদারুল ইসলাম, কুতুবদিয়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ স ম শাহরিয়ার চৌধুরী ও আহত পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো.আবুল কালাম সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে তিনজন মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত তাদের পাঁচজন কর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করে। তবে এদের একজন মো. নোমান চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, গতকাল মাগরিবের নামাজের পর উপজেলার উত্তর ধুরুং বাজারে সমাবেশ আহ্বান করে জামায়াত। এতে নাশকতার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় কুতুবদিয়া থানা পুলিশ সমাবেশস্থল থেকে কয়েকটি মাইক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সশস্ত্র নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে ৪ জন নিহত হয়। এ সময় থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কালাম ও শরিফুল ইসলামসহ ৯জন পুলিশ ও আনসার সদস্য আহত হয়। এছাড়া স্থানীয় সংবাদকর্মী মোহাম্মদ রাসেলসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারী পুলিশকে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
পুলিশ জানায়, হামলাকারীরা পুলিশের জিপটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অপপ্রচার চালিয়ে তারা স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে তাণ্ডব চালায়। তারা তিনটি মোটর সাইকেল ও আরো একটি জিপসহ দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় ২০টি বেশি দোকানে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, থানা ও উপজেলা প্রশাসনিক ভবনে নাশকতা চালানোর জন্য সন্ধ্যার দিকে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা উপজেলার ৬ ইউনিয়নের নারী-পুরুষদের জড়ো করছিল। এ সময় অবরুদ্ধ ছিল কুতুবদিয়া থানার পুলিশ। খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। বিডিনিউজ জানায়, মাগরিবের নামাজের পর জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিকর্মীরা ধুরুং বাজার মসজিদ থেকে মিছিল করতে জড়ো হলে মোটর সাইকেল ও জিপে করে সেখানে পুলিশ যায়। এ সময় জামায়াতকর্মীরা পুলিশের মোটর সাইকেল ও জিপে অগ্নিসংযোগ এবং গুলি চালালে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আহমদ, কুতুবদিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলামসহ অতিরিক্ত পুলিশ। ওই সময় তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে হামলাকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান গত রাত ৯টায় আজাদীকে জানান, নানা অপপ্রচার চালিয়ে নারী-পুরুষদের জড়ো করে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র কর্মীরা নাশকতা শুরু করে। তারা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। চকরিয়া ও পেকুয়া থেকে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
কাল হরতাল : কুতুবদিয়ায় জামায়াতের ৪ কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহত্তর চট্টগ্রামে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দলীয় জোট। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টায় কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী ও উখিয়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। ইসলামী ছাত্রশিবির কক্সবাজার জেলার সভাপতি দিদারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আজ বুধবার বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল হবে। বৃহস্পতিবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে পূর্ণদিবস হরতাল পালন করা হবে।