ম্যাচের স্কোরকার্ড বিভিন্ন সময়ে যাই বলুক, ব্যাট করতে নেমে কখনই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। নিয়মিত উইকেট নিয়ে সব সময়ই তাদের চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই যার পথ দেখিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
দেশসেরা এই পেসারের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন হামিশ রাদারফোর্ড (১)। অ্যান্টন ডেভসিচ ও গ্র্যান্ট এলিয়টের ৪০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভেঙ্গে দৃশ্যপটে আসেন স্পিনাররা। ১৩তম ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ডেভসিচকে (১৯) ফেরত পাঠান অফস্পিনার সোহাগ গাজী।
পরের ওভারের প্রথম বলে বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এলিয়টকে।
চতুর্থ উইকেটে কোরি অ্যান্ডারসনের সঙ্গে রস টেইলরের ৬১ রানের জুটি ভাঙ্গেন মাশরাফি। তবে এতে বড় অবদান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের। অ্যান্ডারসনের (৩৭) ব্যাটের কানায় লেগে বল প্রথম স্লিপের দিকে যাওয়ার সময় বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্লাভসবন্দী করেন তিনি।
টেইলরের সঙ্গে অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের জুটি স্বাগতিকদের স্বপ্ন ভঙ্গের হুমকি হয়ে ওঠার আগেই ভেঙে দেন মুমিনুল হক। ম্যাককালামকে (১৪) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে অতিথিদের বিশাল এক ধাক্কা দেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
পরের ওভারেই টম ল্যাথামের (০) রান-আউট বিপদ আরো বাড়ায়। পাওয়ার প্লেতে জেমস নিশামকে নাঈম আর বিপজ্জনক টেইলরকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যাচে পরিণত করে বাংলাদেশের জয়কে সময়ের ব্যাপারে পরিণত করেন সোহাগ।
এরপরও চেষ্টা করেছিলেন নাথান ম্যাককালাম ও কাইল মিলস। মুমিনুল নাথানকে (২৫) মাহমুদুল্লাহর ক্যাচে পরিণত করার পর লড়াই চালিয়ে যান মিলস।
এক প্রান্তে মিলস ২৭ রানে অপরাজিত থাকলেও টিম সাউদিকে বোল্ড করে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন মাশরাফি। অতিথিদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের এটি টানা ষষ্ঠ জয়।
বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি ও সোহাগ তিনটি করে উইকেট নেন।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ২৪৭ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
অভিষিক্ত শামসুর রহমানের সঙ্গে তামিম ইকবালের ৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশকে ভালো সূচনা এনে দিলেও রানের গতি ছিল ধীর। এনামুল হকের জায়গায় খেলতে নেমে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন শামসুর।
রান রেটের চাপে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে নাথান ম্যাককালামের বলে শামসুর (২৫) স্টাম্পিং হয়ে গেলে ভাঙে ১০১ বল স্থায়ী জুটি।
এরপর কোরি অ্যান্ডারসনের বলে পুল করতে গিয়ে নাথানের হাতে ধরা পড়েন মুমিনুল (৩৪)।
দেখেশুনে খেলে অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর-পরই আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে অ্যান্ডারসনের বলে বোল্ড হয়ে যান তামিম। ম্যাচের সর্বোচ্চ ৫৮ রান করা তামিমের ৮৬ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ১টি ছক্কা।
প্রথম ম্যাচে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে দেয়া অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও নাঈম ইসলাম দলকে ৩ উইকেটে ১৬৯ রানের স্বস্তিকর জায়গায় নিয়ে যান। কিন্তু ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে পর পর তিন ওভারে মুশফিক (৩১), নাঈম (১৬) ও নাসির হোসেনের (৩) বিদায় স্বাগতিকদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।
১৭৩/৬-এ পরিণত হওয়া বাংলাদেশকে আড়াইশ’র কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব সোহাগ গাজী (২৬), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২১) ও মাশরাফি বিন মুর্তজার (১৪) কার্যকর ইনিংসের।
সপ্তম উইকেটে সোহাগ-মাহমুদুল্লাহর ৪৮ রানের চমৎকার জুটি ভাঙা অ্যান্ডারসন ৪০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের সেরা বোলার। রুবেল হোসেনকে বোল্ড করে এক ওভার বাকি থাকতেই স্বাগতিকদের ইনিংস থামিয়ে দেয়া জেমস নিশাম ৪ উইকেট নেন ৫৩ রানে।
এটি বাংলাদেশের ১৫তম দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ জয়। আর দেশের মাটিতে টানা দ্বিতীয় সিরিজ জিতলো মুশফিকরা। গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৯ ওভারে ২৪৭ (তামিম ৫৮, শামসুর ২৫, মুমিনুল ৩১, মুশফিক ৩১, নাঈম ১৬, নাসির ৩, মাহমুদুল্লাহ ২১, সোহাগ ২৬, মাশরাফি ১৪, রাজ্জাক ৪*, রুবেল ২; অ্যান্ডারসন ৪/৪০, নিশাম ৪/৫৩, নাথান ১/৪২, মিলস ১/৪৭)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৬.৪ ওভারে ২০৭ (ডেভসিচ ১৯, রাদারফোর্ড ১, এলিয়ট ১৪, টেইলর ৪৫, অ্যান্ডারসন ৩৭, ব্রেন্ডন ১৪, ল্যাথাম ০, নিশাম ৮, নাথান ২৫, মিলস ২৭*, সাউদি ০; সোহাগ ৩/৩৪, মাশরাফি ৩/৪৩, মুমিনুল ২/১৩, রাজ্জাক ১/৩৫)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সোহাগ গাজী