প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের পরাজয় ও আওয়ামী লীগের দুর্গ গাজীপুর পতনের পর এখন বিদেশ থেকে নতুন সেনাপতি নিয়ে আসা হয়েছে। এই সেনাপতি দিয়ে সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না। পতন ও হার শুরু হলে নতুন সেনাপতি দিয়ে তা ঠেকানো যায় না। দুর্গে যখন পতনের সুর বেজে ওঠে তখন নতুন সেনাপতিও সে পতন রোধ করতে পারে না। তিনি বলেন, যে সেনাপতির মাটি ও মানুষের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তার কথায় কাজ হবে না। গতকাল জাতীয় প্রেস কাবে নাগরিক অধিকার রা কমিটি আয়োজিত ‘আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অন্যায় রিমান্ড ও নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। নাগরিক অধিকার রা কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট কলামিস্ট কবি ফরহাদ মজহারের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, বিএফইউজে মহাসচিব বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, শিক-কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান অধ্য সেলিম ভূঁইয়া, প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন, প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ, প্রকৌশলী মিয়া মো: কাইয়ুম, রিয়াজউদ্দিন রিজু, শামিম রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজ দুঃশাসনের জগদ্দল পাথর জাতির ওপর চেপে বসেছে। দেশের গণতন্ত্র গলাটিপে হত্যা করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সময়েই জেগে না উঠলে আমরা দেশের গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারব না। এই দুঃসময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সরকারের এজেন্টরা আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমাদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। গোটা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মাহমুদুর রহমানের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা সমকালীন কোনো ব্যক্তির ওপর হয়নি। মানুষ যখন কারো নির্যাতনের শিকার হয় তখন সে আদালতের কাছে যায়, কিন্তু মাহমুদুর রহমান আদালতের কাছে গিয়েও ন্যায়বিচার পাননি। মাহমুদুর রহমান কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, তিনি বাংলাদশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র পাহারায় নিযুক্ত অকুতোভয় সৈনিক। হতাশ হওয়ার কিছু নেই, আমাদের নতুন শক্তি সঞ্চয় করে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ১/১১-এর অবৈধ সরকার যখন দেশে বিরাজনীতিকরণ শুরু করে তখন দুইজন মানুষ হাতে কলম তুলে নেন। একজন ফরহাদ মজহার এবং অপরজন মাহমুদুর রহমান। তারা দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল তাদের লেখনী। তারা সেদিন কলম না ধরলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম? তিনি বলেন, আমরা এখন ঘরে বসে থাকলে অধিকার আদায় হবে না। এ জালিম সরকার থেকে জনগণের অধিকার আদায় করতে হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেন, আমি ৫৪ বছর ধরে আইনের প্র্যাক্টিস করছি এখনো আমি বুঝলাম না কোন আইনে কেন মাহমুদুর রহমানকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। তার মুক্তি ও নির্যাতন বন্ধের জন্য আমার যা করার তাই করব। এভাবে তিনি জেলে থেকে কেন নির্যাতনের শিকার হবেন? এর বিরুদ্ধে প্রটেকশন নিতে হবে। আমরা সব কোর্টে যাব। তিনি বলেন, ৫৪ ধারায় রিমান্ডে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে আইনজীবীর সামনে জিজ্ঞাসা করতে হবে। তাকে যে নির্যাতন করেছে এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা যেতে পারে। তাকে টর্চার বন্ধে যা কিছু প্রতিকারমূলক করতে পারি তা আমি করব। ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সংগ্রাম করছি। মাহমুদুর রহমান এখন সব চেয়ে বেশি নিপীড়নের বড় উদহারণ। আমরা মনেকরি এই রাষ্ট্রব্যবস্থা ফ্যাসিস্ট। সংবিধান ও বিচার বিভাগকে বিকৃত করেছে। বর্তমান সরকারকে নাৎসী ও মুসোলিনির সাথে তুলনা করা চলে। গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য নাগরিকদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করবে না। তিনি বলেন, আলেম-ওলামারা ঈমান ও আকিদা রক্ষার কথা বলেছেন। ১৩ দফার কথা বলার কারণে গভীর রাতে আলেম-ওলামাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জুলুমের বিরুদ্ধে ও শ্রমিক অধিকার আদায়ে মজলুম শ্রেণীর পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা অবিলম্বে আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামি টিভি খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। রুহুল আমীন গাজী বলেন, মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে বারবার যেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ইতিহাসে এমন নজির নেই। মাহমুদুর রহমানের লেখা ও বক্তব্যে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। নাস্তিকদের বিপক্ষে ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণেই তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। শওকত মাহমুদ বলেন, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬৮টি মামলা করা হয়েছে। কোনো সম্পাদকের বিরুদ্ধে এত মামলা করা হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কখনো দেখেননি। সর্বশেষ গণজাগরণ মঞ্চের অযৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, এই রমজান মাসেও সরকার মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নিয়ে নির্যাতন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, সরকার মনে করেছে চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে। এবার জনগণ জেগেছে। নির্বাচন দিতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে।