উচ্চশিক্ষার নামে সনদ বাণিজ্য : আট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি : সব ক্যাম্পাস উচ্ছেদ করার নির্দেশ -

অবৈধভাবে চলা দেশি-বিদেশি আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং সকল ক্যাম্পাস উচ্ছেদ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, মাঠ প্রশাসন দুর্নীতিগ্রস্ত ও অনুমোদনহীন ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধে উদাসীনতা দেখাচ্ছে এবং গতকাল পর্যন্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।

এ বিষয়ে শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেন, 'সনদ বাণিজ্য এবং শিক্ষা নিয়ে কাউকেই ব্যবসার সুযোগ দেয়া হবে না।' তিনি জানান, 'বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আমরা সম্প্রতি আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে।'

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সনদ বাণিজ্য ও মালিকানা বিরোধের কারণে শিগগিরই আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আছে দারুল ইহসান, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, নর্দাণ ইউনিভার্সিটি প্রমুখ।

গত ২৩ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, 'রাজশাহীর বাগমারা উপজেলাধীন অনুমোদনহীনভাবে 'অর্জুনপাড়া মদিলাতুল উলুম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়' নামে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত নয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় নামধারী এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম অনুমোদনবিহীন ও অবৈধ। এই প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং উচ্ছেদ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।'

বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার শর্ত পালন এবং শিক্ষার মান বজায় রাখতে ব্যর্থতার দায়ে ইতোমধ্যেই 'আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি'র সাময়িক অনুমতি সনদ বাতিল করা হয়েছে। রাজধানীর বনানী ও বারিধারাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে বন্ধ ও উচ্ছেদের জন্য গত ১৭ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

একই ধরনের নানা অভিযোগে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য গত ১০ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ধানম-ি আবাসিক এলাকার (সড়ক নং-৫/এ) ৫৭ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি-ইউএসএ, ৩/৩ লালমাটিয়া হাউজিং এস্টেটে অবস্থিত নর্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, ধানম-ি আবাসিক এলাকার (সড়ক নং-৭৪) ৫৯/এ বাড়িতে অবস্থিত ভূইয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ধানম-ি আবাসিক এলাকার (সড়ক নং-২৭) ৪৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত 'এসএএফএস', ধানম-ি আবাসিক এলাকার (সড়ক নং-৪) ১৪ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত 'চ্যান্সারি একাডেমি অব ইংলিশ ল' এবং উত্তরার ৭নং সেক্টরে ৪২ নম্বর রবীন্দ্র সরণিতে অবস্থিত 'দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি' বা টিআইইউ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কাগজ-কলমে এসব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমই বর্তমানে চলমান আছে। কারণ ইউজিসির একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ব্যবসায়ীরা এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে সনদ বাণিজ্য করছে। আর সনদ বাণিজ্যের ভাগভাটোয়ারা ইউজিসি ও স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারাও পাচ্ছে। ফলে সরকার বন্ধ ঘোষণার প্রায় সাত মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। আর প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় শিক্ষা প্রশাসনও কঠোর অবস্থানে যেতে পারছে না। - See more at: 

Techvoice template ad banner
Related Posts
Previous
« Prev Post