চট্টগ্রাম: হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। তবে ঘেরাও কর্মসূচি পালনের কোনো নির্দিষ্ট সময় সংগঠনটি ঘোষণা করেনি।
শনিবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসা মিলনায়তনে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচিসহ মোট সাত দফা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির আহমদ শফী। সম্মেলন থেকে আট দফা দাবিও ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে প্রস্তাবিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন’২০১৩ সংসদে পাস না করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর ১২টায় সারাদেশে একযোগে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ঘোষিত অন্য কর্মসূচির মধ্যে আছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন করা, ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ওলামা-সুধী সমাবেশ এবং পেশাজীবী সংলাপের আয়োজন করা, আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে দু’দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলন করা, ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেক জেলায় শানে রেসালত সম্মেলন, ‘শহীদ’দের কবর জিয়ারত ও ‘শহীদ’দের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রয়োজনীয় তথ্য কেন্দ্রে প্রেরণ করা এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সচিবালয় ঘেরাও। হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, নূর হোসাইন কাশেমী, জুনায়েদ আল হাবীব, সাইফুর রহমান, মোস্তাফা আল হোসাইনী, জাফর উলাহ খান, আব্দুল লতিফ নেজামী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনুর পাশা, সেলিম উল্লাহ, মোহাম্মদ ইউনুস, আজাহারুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, আবুল হাছনাত আমিনী, সালাউদ্দিন, শামসুল আলম, মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। সম্মেলনে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট শূরা কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া ২৫ সদস্য বিশিষ্ট সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে হেফাজতের আলোচিত-সমালোচিত নেতা মাইনউদ্দিন রুহীকে সম্মেলনস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।
সম্মেলন থেকে ঘোষিত দাবিগুলো হচ্ছে, হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন, গত ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সংঘটিত ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ওয়াক্কাছের মুক্তি, আমাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নারী নীতিমালা প্রণয়ন, কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আইন’২০১৩ সংসদে পাস করার তৎপরতা বন্ধ করা, মাদ্রাসায় ছাত্র কমানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করা, আহমদ শফীসহ আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রী-এমপিদের মিথ্যাচার বন্ধ করা, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমানের মুক্তি ও বন্ধ করে দেওয়া মিডিয়া খুলে দেওয়া।
উল্লেখ্য, কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগসহ সারাদেশে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের নাস্তিক আখ্যায়িত করে এবং ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষী লেখালেখির অভিযোগ তুলে গত ফেব্রুয়ারিতে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। শুরু থেকেই সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি ও কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি আলোচিত হয়ে ওঠে। গত ৫ মে সংগঠনটির ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। শত শত দোকানপাট, কোরআন শরিফ ও যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা মতিঝিলে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে পরদিন ভোরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মতিঝিল থেকে সরিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর হেফাজতে ইসলাম তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী নিহত হবার অভিযোগ তোলে। তাদের অভিযোগে সুর মেলায় বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধীদলও। তবে শনিবার হেফাজতে ইসলামের ওলামা-মাশায়েখে সম্মেলনে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করার সেই অভিযোগ আর কোন নেতা তোলেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। |
Previous
« Prev Post
« Prev Post
Next
Next Post »
Next Post »
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)