স্টাফ রিপোর্টার: সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাই সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না সংস্থাটি। বাংলাদেশে সফররত ইইউ প্রতিনিধি দল এ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও। এসব বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিরা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছেন। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে না বলেও সংস্থাটির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। ইইউর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত ৭ই সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে ১৫ দিনের সফর শুরু করে ইইউ প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত ইউলিয়াম হানা।
গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসিকে তাগিদ দিয়েছে ইইউ প্রতিনিধি দল। গত মে মাস থেকে পর্যবেক্ষক পাঠাতে ইসিকে আমন্ত্রণ জানাতে চাপ দিয়ে আসছিল ইইউ। তবে এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে ইইউ। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও তারা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছে কমিশন সূত্র। বৈঠকের শুরুতেই নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি জানতে চান উইলিয়াম হানা। ইইউ প্রতিনিধি বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাই। তবে এর আগে অবশ্যই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তফসিল ঘোষণা হবে কিনা সে সম্পর্কেও জানতে চান তারা। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সব দলকে নিয়ে সমঝোতার উদ্যোগ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। দেশে অনেক বিচক্ষণ ও সিনিয়র রাজনীতিবিদ রয়েছেন। এসব ব্যক্তি জনগণের চাওয়া-পাওয়া বোঝেন। রাজনৈতিক বিষয়ে কমিশন জড়াতে চায় না। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রেফারির ভূমিকা পালন করবো। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা জানায়নি কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাবে ইসি। সাংবাদিকদের কাছে ইইউর রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা ইসির নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অতীতের চেয়ে বর্তমান কমিশন কারিগরি দিক দিয়ে ভাল অবস্থায় আছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে হানা বলেন, নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করবো। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে হানা মন্তব্য করতে রাজি হননি। হানা আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে ইসির ১০ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প রয়েছে, আমরা তা নিয়ে আলোচনা করেছি। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানার নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ২৭শে আগস্ট ইসির সঙ্গে কূটনৈতিকদের বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তাগিদ দেয়া হয়। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ও প্রস্তুতির সার্বিক বিষয় জানতে চান তারা।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে গতকালের বৈঠকেও ইইউ প্রতিনিধিরা একই তাগিদ দেন। বৈঠকে তারা নির্বাচনকালীন সরকার এবং ৯০ দিনের মেয়াদের বিষয়ে স্পিকারের কাছ থেকে অবহিত হন।
এদিকে গত রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকায় অবস্থিত একটি রেস্ট হাউজে ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতের দুই নেতা। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জামায়াত নেতারা নির্বাচন বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। বর্তমান সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত অবাধে কার্যক্রম চালাতে পারছে না বলেও তারা ইইউ প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন। বৈঠকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিষয়ে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে ইইউ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
মঙ্গলবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধি দল। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকের পর ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান উইলিয়াম হানা সাংবাদিকদের জানান, তারা নির্বাচন বিষয়ে দুই দলকে সংলাপের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন।
এর আগের দিন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউ প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকেও প্রতিনিধি দল সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দেয়।
সফরের প্রথম দিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকেও সংলাপের তাগিদ দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের গুলশানের বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক শেষে ইইউর রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা জানিয়েছিলেন চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণের জন্য সংলাপের কোন বিকল্প নেই। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারলে পাশে থাকবে ইইউ।
সংসদের মেয়াদপূর্তির আগেই নির্বাচন: স্পিকার
সংসদ রিপোর্টার জানান, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো সংসদের মেয়াদপূর্তির আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে স্পিকারের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি দলকে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনকালীন ৯০ দিন নিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রতিনিধি দল। ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা। বৈঠক শেষে স্পিকার বলেন, ইইউ নির্বাচনকালীন সময় নিয়ে জানতে চেয়েছে। নির্বাচন কখন হবে সেটাও জানতে চেয়েছে। এ সময় তারা তাদের পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেছে। তিনি আরও বলেন, ২৫শে অক্টোবর ও ২৪শে জানুয়ারি, এ দুটি তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিষয়টি জানতে চান। আমি বলেছি, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো সংসদের মেয়াদপূর্তির আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল কখন পাঠাবে সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা ৯০ দিন নিয়ে জানতে চেয়েছে বলেও তিনি জানান। ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে শিরীন শারমিন বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউ পর্যবেক্ষক দল কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছে। আমি তাদের বলেছি ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে তারা কাজ করতে পারে। সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে ইইউ রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে সংসদ সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে স্পিকার বলেন, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষের দিকে। সবার প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদ গঠন। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেয়া।
বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে আবারও বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের অফিস থেকে একথা বলা হয়েছে। এ মর্মে লিখিত একটি প্রশ্নের জবাব দেয়া হয় ১০ই সেপ্টেম্বর। প্রশ্নটি ছিল এরকম- বাংলাদেশের অত্যাসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর মন্তব্য করুন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনা ও সহিংসতা এড়াতে এর পরের পদক্ষেপ কি হবে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, আমরা বার বার বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তাদেরকে বলেছি নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে তাদেরকে একমত হতে ও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজি হতে। এর পরে কি হবে সেটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোই ঠিক করবে। তবে যে কোন সমাধানের জন্য প্রয়োজন সহিংসতা এড়িয়ে চলা। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে উৎসাহিত করে চিঠি লিখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসিকে তাগিদ দিয়েছে ইইউ প্রতিনিধি দল। গত মে মাস থেকে পর্যবেক্ষক পাঠাতে ইসিকে আমন্ত্রণ জানাতে চাপ দিয়ে আসছিল ইইউ। তবে এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে ইইউ। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও তারা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছে কমিশন সূত্র। বৈঠকের শুরুতেই নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি জানতে চান উইলিয়াম হানা। ইইউ প্রতিনিধি বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাই। তবে এর আগে অবশ্যই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তফসিল ঘোষণা হবে কিনা সে সম্পর্কেও জানতে চান তারা। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সব দলকে নিয়ে সমঝোতার উদ্যোগ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। দেশে অনেক বিচক্ষণ ও সিনিয়র রাজনীতিবিদ রয়েছেন। এসব ব্যক্তি জনগণের চাওয়া-পাওয়া বোঝেন। রাজনৈতিক বিষয়ে কমিশন জড়াতে চায় না। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রেফারির ভূমিকা পালন করবো। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা জানায়নি কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাবে ইসি। সাংবাদিকদের কাছে ইইউর রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা ইসির নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অতীতের চেয়ে বর্তমান কমিশন কারিগরি দিক দিয়ে ভাল অবস্থায় আছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে হানা বলেন, নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করবো। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে হানা মন্তব্য করতে রাজি হননি। হানা আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে ইসির ১০ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প রয়েছে, আমরা তা নিয়ে আলোচনা করেছি। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানার নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ২৭শে আগস্ট ইসির সঙ্গে কূটনৈতিকদের বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তাগিদ দেয়া হয়। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ও প্রস্তুতির সার্বিক বিষয় জানতে চান তারা।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে গতকালের বৈঠকেও ইইউ প্রতিনিধিরা একই তাগিদ দেন। বৈঠকে তারা নির্বাচনকালীন সরকার এবং ৯০ দিনের মেয়াদের বিষয়ে স্পিকারের কাছ থেকে অবহিত হন।
এদিকে গত রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকায় অবস্থিত একটি রেস্ট হাউজে ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতের দুই নেতা। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জামায়াত নেতারা নির্বাচন বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। বর্তমান সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত অবাধে কার্যক্রম চালাতে পারছে না বলেও তারা ইইউ প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন। বৈঠকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিষয়ে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে ইইউ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
মঙ্গলবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধি দল। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকের পর ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান উইলিয়াম হানা সাংবাদিকদের জানান, তারা নির্বাচন বিষয়ে দুই দলকে সংলাপের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন।
এর আগের দিন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউ প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকেও প্রতিনিধি দল সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দেয়।
সফরের প্রথম দিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকেও সংলাপের তাগিদ দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের গুলশানের বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক শেষে ইইউর রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা জানিয়েছিলেন চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণের জন্য সংলাপের কোন বিকল্প নেই। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারলে পাশে থাকবে ইইউ।
সংসদের মেয়াদপূর্তির আগেই নির্বাচন: স্পিকার
সংসদ রিপোর্টার জানান, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো সংসদের মেয়াদপূর্তির আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে স্পিকারের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি দলকে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনকালীন ৯০ দিন নিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রতিনিধি দল। ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা। বৈঠক শেষে স্পিকার বলেন, ইইউ নির্বাচনকালীন সময় নিয়ে জানতে চেয়েছে। নির্বাচন কখন হবে সেটাও জানতে চেয়েছে। এ সময় তারা তাদের পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেছে। তিনি আরও বলেন, ২৫শে অক্টোবর ও ২৪শে জানুয়ারি, এ দুটি তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিষয়টি জানতে চান। আমি বলেছি, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো সংসদের মেয়াদপূর্তির আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল কখন পাঠাবে সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা ৯০ দিন নিয়ে জানতে চেয়েছে বলেও তিনি জানান। ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে শিরীন শারমিন বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউ পর্যবেক্ষক দল কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছে। আমি তাদের বলেছি ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে তারা কাজ করতে পারে। সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে ইইউ রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে সংসদ সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে স্পিকার বলেন, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষের দিকে। সবার প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদ গঠন। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেয়া।
বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে আবারও বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের অফিস থেকে একথা বলা হয়েছে। এ মর্মে লিখিত একটি প্রশ্নের জবাব দেয়া হয় ১০ই সেপ্টেম্বর। প্রশ্নটি ছিল এরকম- বাংলাদেশের অত্যাসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর মন্তব্য করুন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনা ও সহিংসতা এড়াতে এর পরের পদক্ষেপ কি হবে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, আমরা বার বার বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তাদেরকে বলেছি নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে তাদেরকে একমত হতে ও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজি হতে। এর পরে কি হবে সেটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোই ঠিক করবে। তবে যে কোন সমাধানের জন্য প্রয়োজন সহিংসতা এড়িয়ে চলা। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে উৎসাহিত করে চিঠি লিখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।