যা কিছু সব হাসিনা-খালেদার জন্য!

গতকাল রোববারও বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় সাংসদেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্� গতকাল রোববারও বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় সাংসদেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্দ ও উদাহরণ ব্যবহার করেন।
জাতীয় সংসদে অশালীন ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারের জন্য সমালোচিত কয়েকজন সাংসদ বলেছেন, তাঁরা দলীয় প্রধানদের নিয়ে সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তাই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করছেন। তবে তাঁরা প্রত্যেকে বলেছেন, সংসদে অশালীন বক্তব্য বিনিময় হোক, তা তাঁরা চান না।
সংরক্ষিত আসনের বিএনপিদলীয় সাংসদ সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া, শাম্মী আখতার, রেহানা আক্তার বলেছেন, সংসদের পরিবেশ ভালো রাখতে সংসদ নেতাকে (প্রধানমন্ত্রী) উদ্যোগ নিতে হবে। দায় তাঁর।
অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ অপু উকিল বলেছেন, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা দলের মহিলা সাংসদদের অশ্লীল কথা বলতে উত্সাহিত করেন। তাঁরা উদ্যোগ নিয়ে এসব কথাবার্তা বন্ধ করতে না পারলে সংসদের পরিবেশ ভালো হবে না।
গতকাল রোববারও বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় সাংসদেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্দ ও উদাহরণ ব্যবহার করেন। রেহানা আক্তারের ১৭ মিনিটের ভাষণে স্পিকার একাধিকবার মাইক বন্ধ করে দেন। সরকারদলীয় সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির বক্তব্যে আপত্তিকর কথাবার্তা থাকায় বিরোধীদলীয় সাংসদেরা অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন।
সংসদে এখন চলছে বাজেট অধিবেশন। এই অধিবেশনে মূলত বাজেটের ওপর আলোচনা হয়ে থাকে। কিন্তু বাজেট বাদ দিয়ে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর ব্যক্তিগত পরিচয়, তাঁদের পরিবার। এ জন্য প্রখ্যাত কবির কবিতার চরণ উদ্ধৃত করার আড়ালে অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করতেও পিছপা হচ্ছেন না সাংসদেরা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাংসদ শাম্মী আখতার প্রথম আলো অনলাইনকে বলেন, সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নিজেই উসকানিমূলক কথা বলেন, মিথ্যা তথ্য দেন, মিথ্যা বলেন। সে সময় দলের প্রতিষ্ঠাতা, দলের নেতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তায়। শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে মদের বোতল পাওয়া গেছে। তিনি নিজে শালীনতার ধার ধারেননি। অথচ সংসদ নেতা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব অনেক।
শাম্মী আখতার বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা কখনো কোনো কথার জবাব দেন না। কিন্তু দলের সাংসদদের ‘হূদয়ে আঘাত লাগে’। তাই তাঁরা প্রতিবাদ করেন, প্রতিরোধ করেন মাত্র। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, সংসদে অশ্লীল কথার চর্চা শিশুদের ওপর ভালো প্রভাব রাখছে না। তাঁর সন্তান টেলিভিশনে সংসদ দেখে। এক দিন সে প্রশ্ন করেছে, ‘মা, শিরীন আন্টি তোমার মাইক বন্ধ করে দিল কেন?’
সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া মনে করেন, আগে প্রধানমন্ত্রীকে ঠিক হতে হবে। তাঁর ভাষায়, প্রধানমন্ত্রীকে ‘মন-মানসিকতা, জিহ্বা, মস্তিষ্ক’ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, না হলে সংসদের পরিবেশ ঠিক হবে না। আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ (শিরীন শারমিন চৌধুরী) স্পিকার হয়ে সংসদ নেতাকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, এটা অসম্ভব। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অপু উকিল সেদিন খালেদা জিয়ার পিতৃপরিচয় নিয়ে কটূক্তি করতে গিয়ে সিদ্দিক সালিকের যে বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, সে রকম বই বাজারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ অপু উকিলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তাঁরা নেননি।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সমালোচনা করে বিএনপিদলীয় সাংসদ রেহানা আক্তার বলেন, অশ্লীল, অসংসদীয় কথা বলার দায়ে বিরোধীদলীয় সাংসদদের মাইক বন্ধ হলেও সরকারদলীয় সাংসদদের মাইক বন্ধ হয় না। তাঁরা যখন বলেন, নিষিদ্ধপল্লিতে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার হয়, তখন স্পিকার মাইক বন্ধ করেন না। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারদলীয় সাংসদেরা যখন অশালীন কথা বলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের উত্সাহিত করেন। এক নম্বর ব্যক্তি যদি ঠিক না হন, তাহলে সংসদ ঠিক হবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাংসদ অপু উকিলের পাল্টা অভিযোগ, বিরোধী দল সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদদের অশ্লীল কথা বলতে উত্সাহ দেয়। না হলে বিরোধীদলীয় হুইপের চেয়ে সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদেরা বেশি সময় বক্তৃতার জন্য পান কেন? অপু উকিল বলেন, তিনি বাজেট বক্তৃতায় কোনো অসংসদীয় কথা বলতে চাননি। কিন্তু বিএনপির সাংসদেরা বলেছেন, সজীব মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। তাঁর স্ত্রী ইহুদি। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর পরিবার নিয়ে কুত্সা রটান। এসবের জবাব দিতেই তিনি ওই বিষয়গুলোর অবতারণা করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতাকে নিয়ে কটূক্তি করতে চান না বলে তিনি জানান। বিরোধীদলীয় নেতার জন্মপরিচয় সম্পর্কে যে বইটি থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, সেটি আসলেই বাজারে পাওয়া যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে।
সংসদে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে অশ্লীল বাগযুদ্ধ বন্ধ করতে স্পিকার একাধিকবার দুই পক্ষের নেতাদর সঙ্গে বসেছেন। কিন্তু দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

Techvoice template ad banner
Related Posts
Previous
« Prev Post