লিও মেসির জানা-অজানা দশ (ভিডিও)


এই সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত, ডেকোর বদলি হিসেবে মাঠে নামছেন মেসি। বার্সেলোনার হয়ে তাঁর লা লিগা অভিষে� এই সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত, ডেকোর বদলি হিসেবে মাঠে নামছেন মেসি। বার্সেলোনার হয়ে তাঁর লা লিগা অভিষেক, ২০০৪ সালের অক্টোবরে। মেসির মাঠে নামা দেখছেন তখনকার কোচ রাইকার্ড (বেঞ্চে বসা)
ফাইল ছবি
রোজারিও বুঝি বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর। বুয়েনস এইরেস থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের শহরটিতে জন্মেছিলেন চে গুয়েভারা, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্যতম নেতা। এই রোজারিওতেই জন্মেছেন আরেক বিপ্লবী, যার রণক্ষেত্র ফুটবল মাঠে আর অস্ত্র বল। ফুটবলকেই যিনি পাল্টে দিয়েছেন জাদুমন্ত্রে। সেই বিপ্লবীর নাম লিওনেল মেসি। চের সঙ্গে তাঁর মিল আরেক জায়গায়। তিনিও জন্মেছেন জুনে, তবে তারিখটা ভিন্ন। চে ১৪-তে, আর মেসি ২৪-এ অর্থাত্ আজকের এই দিনে।
বার্সেলোনার এই আর্জেন্টাইন জাদুকরকে নিয়ে নতুন কিছু লেখাই বাহুল্য। তবে এই ফাঁকে আসুন জেনে নিই মেসি সম্পর্কে কম জানা এবং অজানা দশটি তথ্য—

এক. মেসি ইতালিয়ান!
মেসিকে নিয়ে গর্ব করতে পারে ইতালি। হতাশাও প্রকাশ করতে পারে ইতালি। গর্ব, কারণ মেসির দেহে আছে ইতালিয়ান রক্ত। হতাশা, কারণ মেসি ইতালির হয়ে তো আর খেলেন না! মেসির পূর্বপুরুষেরা ইতালির আনকোনার অধিবাসী ছিলেন। ১৮৮৩ সালে ভাগ্যের সন্ধানে অ্যাঞ্জেলো মেসি চলে আসেন আর্জেন্টিনায়।

দুই. গ্রান্দোলিতে শুরু
মেসির প্রথম ক্লাব হিসেবে নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের কথা লেখা হয়। সেটা একদিক দিয়ে ঠিকই আছে। এখানে যুবদলে খেলেই পরে বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘খামার বাড়ি’তে যাত্রা। তবে একেবারে নির্ভুল তথ্য চাইলে মেসির প্রথম ক্লাবটির নাম কিন্তু গ্রান্দোলি। রোজারিওর এই অপেশাদার ছোট্ট ক্লাবটি ছিল আসলে মেসির বাবা হোর্হের। সেখানেই পাঁচ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন আজকের এই মহা তারকাটি।

তিন. কষ্টের শৈশব
শখের ফুটবল কোচ হলেও এ দিয়ে জীবন ধারণ করা সম্ভব ছিল না হোর্হের, সম্ভব ছিল না পরিবারের চাওয়া পূরণ করা। আর তাই কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়েছে হোর্হেকে। মেসির মা সেলিয়াও খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেছেন। ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের ঘাটতির অসুখ ধরা পড়ে। মাসে ৯০০ ডলারের ব্যয়বহুল এই চিকিত্সার ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল না মেসির পরিবারের পক্ষে।

চার. ন্যাপকিনেই ইতিহাস!
স্পেনের লেইদায় মেসির কিছু আত্মীয়স্বজন থাকতেন। তাঁদের মাধ্যমেই বালক মেসির অবিশ্বাস্য প্রতিভার খবর পান বার্সার তখনকার ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস। অবশেষে মেসিকে ট্রায়ালে দেখতে রাজি হন। মেসিকে বার্সা নেবেই—এমন কোনো প্রস্তুতি সম্ভবত ছিল না রেক্সাসের। কারণ, বালক মেসির ফুটবল-ঝলক দেখার পর তাকে সঙ্গে সঙ্গে সই করানোর জন্য কোনো দলিল-দস্তাবেজ তো দূরের কথা, কোনো কাগজই ছিল না। কিন্তু কাগজের জন্য অপেক্ষা করতে আর তর সইছিল না রেক্সাসের। সঙ্গে থাকা ন্যাপকিনেই মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেন তিনি! মেসির চিকিত্সার সমস্ত ব্যয়ভারও গ্রহণ করে বার্সা।

পাঁচ. ভালোবাসার নাম আর্জেন্টিনা
মেসির নামের পাশে এত এত প্রাপ্তি। চার-চারবারের ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন। কিন্তু তার পরও তাঁর আক্ষেপের শেষ নেই। আরধ্য বিশ্বকাপ যে জেতেননি। মেসির নামের পাশে কিন্তু বিশ্বকাপ থাকতেই পারত। সেটি তিনি জিতে যেতেন ২০১০ বিশ্বকাপেই! যদি স্পেনের জাতীয় দলের প্রস্তাবটিতে ‘হ্যাঁ’ বলে দিতেন। ২০০০ সালে বার্সেলোনায় চলে আসেন মেসি। সিনিয়র দলে অভিষেক ২০০৪ সালে। এরই মধ্যে মেসি প্রস্তাব পেয়েছিলেন স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য। কিন্তু মেসি ঠিক করেন স্পেন নয়, তিনি খেলবেন নাড়িপোঁতা আর্জেন্টিনার হয়েই। মেসি অবশ্য পরে স্পেনের নাগরিকত্বও নিয়েছেন। ২০০৫ সাল থেকে তাঁর দুটো পাসপোর্ট।

ছয়. আর্জেন্টিনায় জনপ্রিয় নন!
সেদিনও এক সাক্ষাত্কারে মেসি স্বীকার করেছেন, বার্সেলোনা কিংবা সারা বিশ্বে তাঁর যতটা জনপ্রিয়তা, সেই তুলনায় নিজের দেশ আর্জেন্টিনায় তাঁকে নিয়ে ততটা মাতামাতি নেই। এর পেছনে বড় কারণ হলো, মেসি শৈশবেই চলে গিয়েছিলেন স্পেনে। আর্জেন্টিনার ফুটবলপাগল মানুষদের ভালোবাসা কুড়াতে হলে বোকা জুনিয়র্স কিংবা রিভার প্লেটের মতো ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতাতে হয়। যেটি মেসি করেননি। ‘বার্সার মেসি আর্জেন্টিনার মেসি হয়ে উঠতে পারেন না’—এটিও তাঁর নিজ দেশে জনপ্রিয়তার পথে বড় বাধা। তবে আশার কথা, জাতীয় দলের হয়েও ফুল ফোটাতে শুরু করেছেন মেসি। নিজ দেশেও জনপ্রিয়তা বাড়ছে তাঁর। আর একটা বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলে তো কথাই নেই!’

সাত. প্রেমিক মেসি
এই একটা ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে ঢের পিছিয়ে আছেন। প্রেমের ময়দানে মেসি ঠিক পাকা খেলুড়ে নন। তবে তারপরও কিন্তু টুকটাক ভালোই ‘খেলেছেন’। প্রেমিকা আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে তাঁর সুখের সংসার। মেসি এর আগে মাকারেনা লেমস নামে এক তরুণীর সঙ্গে প্রেম করেছেন। আর্জেন্টাইন মডেলকন্যা লুসিয়ানা সালাজারকে জড়িয়েও গুঞ্জন ছড়িয়েছিল।

আট. দাতা মেসি
রিয়াল মাদ্রিদকে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করা সেই এল ক্লাসিকোতে দুটো গোল করেছিলেন মেসি। দুটো গোলের পরই জার্সির নিচের টি-শার্টটি উঁচিয়ে ধরে উদযাপন করেছিলেন। যেখানে লেখা ছিল, ‘ফ্র্যাজাইল এক্স সিনড্রোম’। অটিজমের জন্য দায়ী এই অসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেসি আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গঠন করেছেন লিও মেসি ফাউন্ডেশন। আয়ের একটা বড় অংশ মেসি দান করেন এ সব দাতব্য কাজে।

নয়. দিনেই কোটি টাকা!
এ মাসে ফোর্বস সাময়িকী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা খেলোয়াড়দের যে তালিকা দিয়েছে, তাতে মেসির অবস্থান ১০। বছরে মেসি আয় করেন চার কোটি ১৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা! অর্থাত্ প্রতিদিন মেসির আয় ৮৮ লাখ টাকারও বেশি, দিনের আয়েই মেসি প্রায় কোটিপতি! দুই কোটি তিন লাখ ডলার তাঁর বার্ষিক বেতন, আর বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন পণ্যের দূতিয়ালি করে মেসি পান দুই কোটি ১০ লাখ ডলার।

দশ. মেসির ভাইয়েরা
ডিয়েগো ম্যারাডোনার দুই ভাই হুগো ও রাউলও যে ফুটবলার ছিলেন, এই তথ্য পৃথিবীবাসীর অনেকেই জানে না। একইভাবে মেসির খ্যাতির আলোতে ম্লান তাঁর দুই ভাইও। এঁরা অবশ্য আপন ভাই নন, খালাতো ভাই। ম্যাক্সি ও এমানুয়েল বিয়ানকুচ্চি। মেসির মতোই নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এমানুয়েল এখন খেলেন প্যারাগুয়ের ক্লাব অলিম্পিয়াতে। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ভিতোরিয়ার হয়ে এই মৌসুমে মাঠ মাতাচ্ছেন ম্যাক্সি।

সকালের সূর্যই বলে দেয় দিনটি কেমন যাবে। মেসি যে এক সময় ফুটবল দিয়ে বিশ্বজয় করবেন, সেটি বোঝা গিয়েছিল শৈশবেই। তাঁর শৈশবের ফুটবল-ঝলকের কিছুটা দেখুন:

Techvoice template ad banner
Related Posts
Previous
« Prev Post