পুলিশ-ডাকাত বন্দুক যুদ্ধে কুতুবদিয়ার জলদস্যু সম্রাট বাদল নিহত

 কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা ঘাটে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে কুতুবদিয়ার শীর্ষ জলদস্যু বাহিনীর প্রধান সাইফুল ইসলাম বাদল প্রকাশ বাদল ডাকাত নিহত হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১ রাউন্ড গুলি। এ সময় দারোগাসহ চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ জানায়, গোপন সূত্রের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও পেকুয়া থানা পুলিশের একটি দল কুতুবদিয়ার শীর্ষ জলদস্যু বাহিনীর প্রধান বাদল ডাকাতকে ধরতে মগনামা ঘাটের বেড়ীবাঁধের উপর ধাওয়া করে। কিন্তু প্রথমে তারা পালানোর চেষ্টা করলেও এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলী ছুঁড়লে দুপক্ষে বন্দুক যুদ্ধ বেঁধে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে গুলী বিনিময়ের পর আহত অবস্থায় বাদল ডাকাত ধরা পড়ে। বন্দুকযুদ্ধে চার পুলিশ সদস্যও আহত হন।
তারা হলেন-এসআই মুকবুল হোসেন, কন্সটেবল মনছুর (কং/৮৫৩), কন্সটেবল পলাশ বিশ্বাস (কং/৫৮৩) ও কন্সটেবল সাধন বড়ুয়া (কং/৩৮৫)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ রাউন্ড কার্তুজ ও ১৩ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে। গুলি বিনিময়ের শব্দ শুনে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে আসা লোকজন বাদল ডাকাত এর পরিচয় নিশ্চিত করে। আহত বাদল ডাকাতকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে পেকুয়া হাসপাতালে নেয়া হয়, পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হলে তাকে মৃত বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। নিহত সাইফুল ইসলাম বাদল ডাকাত (৫০) কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার মৃত ছৈয়দ আহাম্মদের ছেলে। আহত পুলিশ সদস্যরা পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জানান, কুতুবদিয়ার মানুষের কাছে ভয়ের আরেক নাম ছিল বাদল ডাকাত। সে কুতুবদিয়ার অঘোষিত সম্রাট হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে তাকে ধরার জন্য খুজছিল।
পুলিশ জানায়, উক্ত বাদল ডাকাত কুতুবদিয়া থানার মামলা নং-০৭ (১০) ৯৬, ধারা-অস্ত্র আইন ১৯-ক এর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ ৮টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ৪টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাদল ডাকাত ৭ বৎসর জেল হাজতে আটক থাকার পর ২০০২ সালে মুক্তি পেয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়। ৪ বছর পর ২০০৬ সালে দেশে ফিরে পূনরায় নৌ-ডাকাতি ও অপহরণসহ মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়। সে ২০১১ সালে কুতুবদিয়া থানার উত্তর ধুরুং এলাকার জনৈক ভুটকা মৌলভীকে অপহরণ করে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। ২০১২ সালে একই থানার কৈয়ারবিল এলাকার জনৈক মাহাবুব মাস্টারকে অপহরণ করে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন ধর্নাঢ্য ব্যক্তি ও বোট মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা ও মাসোহারা আদায় করত।
সূত্র জানায়, বাদল ডাকাতের ৩টি স্ত্রী রয়েছে। ১ম স্ত্রী রেহেনা বেগম এর বাপের বাড়ি চকরিয়া থানার খুটাখালীর গর্জনতলী গ্রামে, ২য় স্ত্রী বেগম এর পিত্রালয় উখিয়া থানার মরিচ্যা এলাকার পাইন্যাসা গ্রামে এবং ৩য় স্ত্রী জরিনা খাতুন এর বাপের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার প্রেমেশিয়া (পেরমেইচ্ছা) গ্রামে সে আত্মগোপন করে থাকত।

Techvoice template ad banner
Related Posts
Previous
« Prev Post