মাত্র
১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন
টেন্ডুলকার। জন্ম ২৪ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে। ১৯৮৮ সালে ১৫ বছর বয়সে স্কুল
ক্রিকেটে ব্যক্তিগত ৩২৬ রানে অপরাজিত থেকে বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে রেকর্ড ৬৬৪
রানের জুটি গড়েন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট ও ওয়ান ডে মিলিয়ে ১০০টি
সেঞ্চুরি ও ৩৪ হাজারের বেশি রানের মালিক টেন্ডুলকার ২০১২ সালের ডিসেম্বরে
এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
আমি ছোটবেলার বড় একটা সময় কাটিয়েছি কাকা-কাকির সঙ্গে মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্ক এলাকায়। আমাদের বাড়ির খুব কাছে ছিল খেলার মাঠ। আমার স্কুলটিও ছিল মাঠের কাছেই, যার জন্য আমি মাঠে থাকার সুয়োগ পেতাম অনেকক্ষণ। ছোটবেলার সেই সময়টুকুতে আমি বারবার ফিরে যাই; সেই মাঠের কারণেই আজ আমি শচীন টেন্ডুলকার। রঞ্জি ট্রফি খেলার সময়ের একটা ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে। আমি মুম্বাই দলের হয়ে সেবার মাঠে নেমেছিলাম। আমাদের কোচ ছিলেন সন্দ্বীপ পাতিল। একদিন তিনি আমাকে প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের নেটের পেছনে ডেকে নিয়ে যান। একজন কোট পরা ভদ্রলোককে দেখিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি চেনো তাঁকে?’ আমি তো দীর্ঘদেহী লোকটির দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম। আমি সত্তর ও আশির দশকের ভারতের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান দিলীপ ভেংসরকারের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে যেন কথাই বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে একটি ক্রিকেট ব্যাট উপহার দিলেন। আমি এতই অবাক হয়ে পড়েছিলাম যে ভেংসরকারের অটোগ্রাফ নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার কোচই আমাকে মনে করিয়ে দিলেন ব্যাটটিতে তাঁর অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য। আমার জীবনে সেটি ছিল অন্যতম সেরা একটি ঘটনা। আমার কাছে সেই অটোগ্রাফযুক্ত ব্যাটটি এখনো আছে।
আরেকটি ঘটনা আমাকে নাড়া দেয়। ১৫ বছর বয়সে আমি বিখ্যাত ভারতীয় ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারের কাছ থেকে একজোড়া প্যাড উপহার পেয়েছিলাম। যেটা আমার জন্য ছিল অন্য রকমের অনুপ্রেরণা। ওই প্যাড পরেই আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করি। সেই প্যাডটি নিয়েই আমি ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিলাম। অপরিচিত পরিবেশ আর কঠিন নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে সে খেলা আমার জন্য বেশ হতাশাজনক ছিল। করাচিতে প্রথম ম্যাচেই আমি মাত্র ১৬ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কেন জানি মনে হয়েছিল আমাকে আর কেউ দলে ডাকবে না। সেটাই হয়তো আমার প্রথম ও শেষবারের মতো মাঠে নামা। কিন্তু হতাশ না হয়ে আমি সফরের বাকি অংশটুকুুতে সাধ্যমতো ভালো করার চেষ্টা চালিয়েছিলাম।
আমার কাছে ক্রিকেট হচ্ছে পরিশ্রমের খেলা। এখানে সফলতার জন্য কিন্তু প্রথমেই তোমাকে ক্রিকেটকে অন্তরে ধারণ করতে হবে। তোমাকে খেলার দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে, তাহলেই তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাবে। যেকোনো কিছুর শীর্ষে তাকানোর জন্য তোমার প্রয়োজন সাহস আর সত্যিকারের মনোযোগ। আমার সফলতার পেছনে কঠোর পরিশ্রমের অবদান শতকরা ৭০ ভাগ আর বাকিটুকু সম্ভবত মেধার জোর। অনেকেরই মেধা আছে, কিন্তু অনিয়মের ভিড়ে আর সাহসের অভাবে হারিয়ে যায় সেই মেধাটুকু। তোমার জীবনে যেকোনো সাফল্য অর্জনের জন্য নিয়ম, শৃঙ্খলা ও মনোযোগের কোনোই বিকল্প নেই।
চলার পথে যেমন বাধা-বিপত্তি থাকে, তেমনি খেলার মাঠেও আসে কঠিন সময়। চলার পথ কখনোই মসৃণ হয় না। নিজেকেই তা বুদ্ধি দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। আমার কঠিন সময়গুলোতে আমার পরিবার সব সময়ই পাশে ছিল। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার আজ যা অর্জন, তার পেছনের কারিগর-উৎসাহদাতা আমার বাবা। তাঁর জন্যই আমি আজ এখানে। ক্রিকেট খেলার শুরুর দিকে তিনি আমাকে একবার উপদেশ দিয়েছিলেন, যা সব সময় আমি মাথায় রাখি। বাবা বলেছিলেন—সফলতা যেকোনো মুহূর্তে হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু যেটা কখনোই আমার কাছ থেকে হারাবে না তা হলো আমার ব্যক্তিত্ব। সে জন্য নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আমি আজীবন আমার বাবার সে কথা পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
খেলাধুলা সব সময়ই আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। আমি ছয়-সাত বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করি। আগ্রহের কারণেই আমি রাস্তায় ব্যাট আর বল নিয়ে নেমে যেতাম। আমার আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যার ফলেই আমি আজকে ক্রিকেটার। শত বাধার পরেও আমার সে আগ্রহের আগুন কখনোই নিভে যায়নি। আমার বাবা সব সময়ই আমাকে বলতেন—জীবনের পথচলা কখনোই সহজ ও সরল হয় না, এ কথা সব ক্রিকেটারের জন্যও প্রযোজ্য। আমাদের জীবনে আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে উঠি আর আমাদের জন্য প্রতিটি দিন ভিন্ন আরেকটি নতুন দিন। প্রতিটি সন্ধ্যায় তুমি যেমন সাফল্য নিয়ে বাড়ি না ফিরতে পারো, তেমনি ক্রিকেট খেলায়ও আমি প্রতিদিন ভালো রান নাও করতে পারি। সব ক্ষেত্রেই খারাপ সময় আসে। কিন্তু তুমি যদি তোমার ভুল থেকে নতুন কিছু শিখতে পারো, তোমার কাজ কিংবা খেলাকে সম্মানের সঙ্গে দেখো, তাহলে তুমি সব বাধাই অতিক্রম করতে পারবে। খারাপ পিচ তোমার খেলাকে নষ্ট করতে পারবে না। সবকিছুই নির্ভর করছে তোমার ওপর। তুমিই পারো তোমার পথের সব বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে।
সূত্র: ইন্টারনেট থেকে ক্রিকইনফোর ইন্টারভিউ অবলম্বনে অনুবাদ জাহিদ হোসাইন খান
আমি ছোটবেলার বড় একটা সময় কাটিয়েছি কাকা-কাকির সঙ্গে মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্ক এলাকায়। আমাদের বাড়ির খুব কাছে ছিল খেলার মাঠ। আমার স্কুলটিও ছিল মাঠের কাছেই, যার জন্য আমি মাঠে থাকার সুয়োগ পেতাম অনেকক্ষণ। ছোটবেলার সেই সময়টুকুতে আমি বারবার ফিরে যাই; সেই মাঠের কারণেই আজ আমি শচীন টেন্ডুলকার। রঞ্জি ট্রফি খেলার সময়ের একটা ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে। আমি মুম্বাই দলের হয়ে সেবার মাঠে নেমেছিলাম। আমাদের কোচ ছিলেন সন্দ্বীপ পাতিল। একদিন তিনি আমাকে প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের নেটের পেছনে ডেকে নিয়ে যান। একজন কোট পরা ভদ্রলোককে দেখিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি চেনো তাঁকে?’ আমি তো দীর্ঘদেহী লোকটির দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম। আমি সত্তর ও আশির দশকের ভারতের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান দিলীপ ভেংসরকারের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে যেন কথাই বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে একটি ক্রিকেট ব্যাট উপহার দিলেন। আমি এতই অবাক হয়ে পড়েছিলাম যে ভেংসরকারের অটোগ্রাফ নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার কোচই আমাকে মনে করিয়ে দিলেন ব্যাটটিতে তাঁর অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য। আমার জীবনে সেটি ছিল অন্যতম সেরা একটি ঘটনা। আমার কাছে সেই অটোগ্রাফযুক্ত ব্যাটটি এখনো আছে।
আরেকটি ঘটনা আমাকে নাড়া দেয়। ১৫ বছর বয়সে আমি বিখ্যাত ভারতীয় ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারের কাছ থেকে একজোড়া প্যাড উপহার পেয়েছিলাম। যেটা আমার জন্য ছিল অন্য রকমের অনুপ্রেরণা। ওই প্যাড পরেই আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করি। সেই প্যাডটি নিয়েই আমি ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিলাম। অপরিচিত পরিবেশ আর কঠিন নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে সে খেলা আমার জন্য বেশ হতাশাজনক ছিল। করাচিতে প্রথম ম্যাচেই আমি মাত্র ১৬ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কেন জানি মনে হয়েছিল আমাকে আর কেউ দলে ডাকবে না। সেটাই হয়তো আমার প্রথম ও শেষবারের মতো মাঠে নামা। কিন্তু হতাশ না হয়ে আমি সফরের বাকি অংশটুকুুতে সাধ্যমতো ভালো করার চেষ্টা চালিয়েছিলাম।
আমার কাছে ক্রিকেট হচ্ছে পরিশ্রমের খেলা। এখানে সফলতার জন্য কিন্তু প্রথমেই তোমাকে ক্রিকেটকে অন্তরে ধারণ করতে হবে। তোমাকে খেলার দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে, তাহলেই তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাবে। যেকোনো কিছুর শীর্ষে তাকানোর জন্য তোমার প্রয়োজন সাহস আর সত্যিকারের মনোযোগ। আমার সফলতার পেছনে কঠোর পরিশ্রমের অবদান শতকরা ৭০ ভাগ আর বাকিটুকু সম্ভবত মেধার জোর। অনেকেরই মেধা আছে, কিন্তু অনিয়মের ভিড়ে আর সাহসের অভাবে হারিয়ে যায় সেই মেধাটুকু। তোমার জীবনে যেকোনো সাফল্য অর্জনের জন্য নিয়ম, শৃঙ্খলা ও মনোযোগের কোনোই বিকল্প নেই।
চলার পথে যেমন বাধা-বিপত্তি থাকে, তেমনি খেলার মাঠেও আসে কঠিন সময়। চলার পথ কখনোই মসৃণ হয় না। নিজেকেই তা বুদ্ধি দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। আমার কঠিন সময়গুলোতে আমার পরিবার সব সময়ই পাশে ছিল। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার আজ যা অর্জন, তার পেছনের কারিগর-উৎসাহদাতা আমার বাবা। তাঁর জন্যই আমি আজ এখানে। ক্রিকেট খেলার শুরুর দিকে তিনি আমাকে একবার উপদেশ দিয়েছিলেন, যা সব সময় আমি মাথায় রাখি। বাবা বলেছিলেন—সফলতা যেকোনো মুহূর্তে হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু যেটা কখনোই আমার কাছ থেকে হারাবে না তা হলো আমার ব্যক্তিত্ব। সে জন্য নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আমি আজীবন আমার বাবার সে কথা পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
খেলাধুলা সব সময়ই আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। আমি ছয়-সাত বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করি। আগ্রহের কারণেই আমি রাস্তায় ব্যাট আর বল নিয়ে নেমে যেতাম। আমার আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যার ফলেই আমি আজকে ক্রিকেটার। শত বাধার পরেও আমার সে আগ্রহের আগুন কখনোই নিভে যায়নি। আমার বাবা সব সময়ই আমাকে বলতেন—জীবনের পথচলা কখনোই সহজ ও সরল হয় না, এ কথা সব ক্রিকেটারের জন্যও প্রযোজ্য। আমাদের জীবনে আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে উঠি আর আমাদের জন্য প্রতিটি দিন ভিন্ন আরেকটি নতুন দিন। প্রতিটি সন্ধ্যায় তুমি যেমন সাফল্য নিয়ে বাড়ি না ফিরতে পারো, তেমনি ক্রিকেট খেলায়ও আমি প্রতিদিন ভালো রান নাও করতে পারি। সব ক্ষেত্রেই খারাপ সময় আসে। কিন্তু তুমি যদি তোমার ভুল থেকে নতুন কিছু শিখতে পারো, তোমার কাজ কিংবা খেলাকে সম্মানের সঙ্গে দেখো, তাহলে তুমি সব বাধাই অতিক্রম করতে পারবে। খারাপ পিচ তোমার খেলাকে নষ্ট করতে পারবে না। সবকিছুই নির্ভর করছে তোমার ওপর। তুমিই পারো তোমার পথের সব বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে।
সূত্র: ইন্টারনেট থেকে ক্রিকইনফোর ইন্টারভিউ অবলম্বনে অনুবাদ জাহিদ হোসাইন খান