প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেই সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি: জাহাঙ্গীর


ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাজীপুরের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। দলের সমর্থিত প্রার্থীর হয়ে কাজও করেছি। ওই সময় দলীয় প্রধান আমাকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। তাঁর কথার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রেখেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নিচ্ছি।’ রবিবার ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গাজীপুরে তার জনপ্রিয়তা কমেনি, বরং বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণদের বড় একটি অংশ বরাবরই তার সঙ্গে আছেন। তাই আগামী নির্বাচনে দলের টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।

জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলেও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলের সমর্থন না পাওয়া কারণ কী?- জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গাজীপুরবাসীর সমর্থন নিয়েই আমি সিটি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু নেত্রীকে আমার সম্পর্কে ভুল বোঝানো হয়েছে। গাজীপুরে কার কী অবস্থান তার সঠিক তথ্য দলের কাছে ছিল না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম মানুষ পরিবর্তন চায়। এটা আমি দলকে বলেছি। কিন্তু আমার কথা মূল্যায়ন করা হয়নি।’

কেন মনে হল মানুষ পরিবর্তন চায়? এমন প্রশ্নের জবাবে বিগত সময় যারা গাজীপুরের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন তাদের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরলেন। বললেন, ‘ইতিপূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের ওপর গাজীপুর নগরীর শিল্প মালিকরা অসন্তুষ্ট। তাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির খবর প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। তাছাড়া  উন্নয়নের জন্য যতটুকু বরাদ্দ কিংবা বৈদেশিক তহবিল পাওয়া যেত তার ৩০ শতাংশ ব্যয় হতো বাকিগুলো যেত পকেটে। মানুষ যখন এসব দুর্নীতির কথা জেনে যায় তখন জনসমর্থন ধরে রাখা কষ্ট। আমি আমার বড় ভাইকে (আজমত উল্লা খান) এসব বিষয়ে আগেই বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে উল্টো তিরস্কার করেছেন। অথচ আমি বাপ-দাদা সম্পত্তি বিক্রি করে, নিজের আয় করা টাকা ব্যয় করে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর তার কথা চিন্তা করে সরে দাঁড়িয়েছিলাম।’


জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি দলের সমর্থিত প্রার্থীর সমালোচনা করছি না। স্থানীয় মানুষের কথাই বলছি। তিনি (আজমত উল্লা) ১৮ বছর টঙ্গী পৌর এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। সে অনুযায়ী  টঙ্গীতে তার জনপ্রিয়তা বেশি থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভোটের পর দেখা গেল তার নিজের এলাকাতেই তিনি জয়ী হতে পারেন নি। যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, মানে নতুন ভোটার হয়েছে তাদের ভোটও তিনি পাননি। এ থেকে বোঝা যায় তিনি বিগত সময়ে নিজের জন্য ভোটার তৈরি করতে পারেনি। তার পরও কি বলবেন মানুষ পরিবর্তন চায়নি?’


তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর মানুষ আমার জন্য কেঁদেছে। নফল রোজা রেখেছে। কিন্তু আমার বড় ভাই আজমত উল্লা খান হেরে যাওয়ার পর কেউ তো চোখের পানি ফেলেনি। বরং তিনি নির্বাচনে হেরে আমাকে দোষারোপ করেছেন। আর আমাকে দোষারোপ করা মানেই জনগণকে দোষারোপ করা।’    


শোনা গেছে, নির্বাচনে  একজন মন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ আপনার পক্ষে ছিলেন। তারা আপনাকে দল থেকে সমর্থন দেয়ার ব্যাপারেও আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু পরে যা ঘটল তা পুরোপুরি ভিন্ন। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে গাজীপুরের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে অনেকেই চেয়েছিলেন আমি নির্বাচন করি। তারা স্থানীয় মানুষের জনসমর্থন বিবেচনায় করেই এটা চেয়েছিলেন। আমাকে তারা আশ্বস্তও করেছিলেন দলের কাছে তারা সঠিক চিত্রটি তুলে ধরবেন। আসলে নেত্রীর  (শেখ হাসিনা) সামনে গিয়ে সত্য বলা যোগ্যতা কিংবা গুণ কিছুই নেই তাদের। যা কারণে নেত্রীকে তারা সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।’  

অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের অনেককেই আমি বিশ্বাস করি না। যারা আমার সামনে এক, দলীয় প্রধানের সামনে এক কথা বলেন তাদের বিশ্বাস করা যায়?’

তবে তার মতে ভোট হচ্ছে জনগণের ভালবাসার ফল। জনগণ যাকে ভালবেসে সমর্থন দেবে সেই জয়ী হবে। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে জাতীয় ইস্যু গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কাজ করেছে। আমি বলি, জাতীয় নয়, স্থানীয় ইস্যুই এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। দল সমর্থিত প্রার্থী মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে পারেননি। তাই তাকে পরাজিত হয়েছে।’


Techvoice template ad banner
Related Posts
Previous
« Prev Post