প্রেম করায় বাবার হাতে খুন
|
কলকাতাঃ মেয়ে কথার অবাধ্য হওয়ায় তাকে শাবলের ঘায়ে মেরে ফেলেছেন বাবা ৷ ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ায় হুড়া থানার জবড়রা গ্রামে। মৃত মেয়েটির বয়স মাত্র ১৫ ৷ মনের মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায়, বাবা শাস্তি দিলেন সদ্য কিশোরীটিকে ৷
পালিয়ে যাওয়ার পথেই তাকে ধরে ফেলেন প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকেরা ৷ বাবা সে সময় সেখানে ছিলেন না ৷ তিনি বদরাগী বলে মা তাকে রাতে রেখে দিয়েছিলেন ভাসুরের বাড়িতে ৷ রাতে স্বামীর রাগ কমেছে মনে করে বুধবার সকালে মেয়েকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যান তার মা ৷ কিন্ত্ত বাড়িতে ঢোকা মাত্র ঘর থেকে শাবল বার করে সজোরে মেয়ের মাথায় আঘাত করেন বাবা ৷ তাতে মাথার খুলি ফেটে যায়, চৌচির হয়ে যায় চোয়াল ৷ সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুমিতা গরাইয়ের ৷ গত বছরই নদিয়ার কারকারা গ্রামে বাবা ও দাদারা ধারালো অস্ত্রে খুন করেছিলেন এক তরুণীকে ৷ মেয়েটির মা দাঁড়িয়ে থেকে স্বামী ও ছেলেদের আচরণকে উত্সাহ দিয়েছিলেন ৷ আবার কলকাতার কাছে ইকবালপুরে বোনকে খুন করে দাদা খোলা তলোয়ার হাতে থানায় চলে গিয়েছিলেন ৷ পুরুলিয়ায় বুধবারের ঘটনায় অবশ্য পুলিশ প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে মৃতার বাবা ধরণী গরাইকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় ৷ হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ভয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে সুমিতার প্রেমিক কৃষ্ণ গরাই ৷ পাশেই নওয়াড়ি গ্রামে তাঁর বাড়ি ৷ নিজের গ্রামেই জবড়রা জুনিয়র হাই স্কুলে পড়ত সুমিতা ৷ বছর খানেক ধরেই কৃষ্ণ গরাইয়ের সঙ্গে যে মেয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা জানতেন সুমিতার মা আরতি গরাই ৷ মেয়ের দেহ পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার পর তিনি বলেন, 'স্বজাতে হলেও, মেয়ের এই বয়সে প্রেম মেনে নেননি ওর বাবা ৷ উনি চেয়েছিলেন পড়াশোনা করে মেয়ে অনেক বড় হোক৷ বারবার বুঝিয়েছিলেন পড়াশোনায় মন দিতে৷ আমিও মেয়েকে বলেছিলাম, চরিত্র খারাপ করিস না মা ৷ ও শুনল না ৷' মঙ্গলবার বিকালেই পাশের গ্রামের কৃষ্ণের হাত ধরে পালিয়েছিল সুমিতা ৷ তাদের একসঙ্গে দেখে সন্দেহ হয় গ্রামের কিছু মানুষের ৷ তাঁরাই খবর দেন সুমিতার বাড়িতে ৷ খবর যায় কৃষ্ণের বাড়িতেও৷ নওয়ারা গ্রামে প্রেমিকের পরিবার এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না-করলেও, জবড়রা গ্রামের একদল বাসিন্দা ও সুমিতার পরিবারের লোকেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সড়কে কিশোরীটিকে দেখতে পান ৷ গ্রামের লোকজন দেখে পালিয়ে যান কৃষ্ণ৷ ফিরিয়ে আনলেও, সুমিতাকে বাড়িতে তুলে ওর জেঠুর বাড়িতে রেখে আসেন তার মা আরতি দেবী৷ তিনি বলেন, 'জানতাম ওর বাবার খুব রাগ৷ কিন্তু ভেবেছিলাম, সকালে রাগ পড়ে যাবে৷ কিন্তু ওকে দেখেই রাগে এমন কাণ্ড ঘটাবেন, বুঝতে পারিনি ৷' ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক ওই পরিবারের আরই দুই কন্যা ৷ সুমিতার দুই বোন রিঙ্কু ও টুম্পা ষষ্ঠ ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে৷ চোখের সামনে দিদিকে মরতে দেখে আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে রয়েছে তারা |
Previous
« Prev Post
« Prev Post
Next
Next Post »
Next Post »
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)