মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমত লাভের মাস রমজানুল মোবারকের আজ ১৪ তারিখ। সৃষ্টিকুলের প্রতি সর্বণ আল্লাহর অশেষ রহমত বর্ষিত হতে থাকে। নইলে জগৎ টিকে থাকতে পারত না। আর মানুষের ব্যাপারে এ নিয়ম আরো সত্য। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছেÑ তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকলে তোমরা অবশ্যই বিপন্ন হতে। (সূরা বাকারা, আয়াত-৬৪) মানুষ প্রতিনিয়ত আল্লাহর নাফরমানি করে। তবুও দুনিয়াবি জীবনে মানুষের রিজিক বন্ধ না করাই আল্লাহর নিয়ম। এটা পরীার জায়গা। শত অন্যায় করলেও পার্থিব জীবনোপকরণ সরবরাহ করা হতে থাকবে। এই সাধারণ রহমত থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না। শুধু পৃথিবীতে নয়, কেয়ামতের ময়দানেও সবার প্রতি রহমত করতে চাইবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কিন্তু যারা আল্লাহর নাফরমানি করেছে তাদেরকে শাস্তি দেয়াও ইনসাফের দাবি। দুনিয়াতে আল্লাহর বিশেষ রহমতের ভাগী হওয়ার জন্য শর্ত রয়েছে। কুরআন মজিদে সূরা আরাফের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত মুহসিনদের নিকটবর্তী। এখানে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অসীম দয়ালু প্রভুর বিশেষ রহমত লাভ করতে হলে মুহসিন বা ইহসানকারী হতে হবে। কুরআন মজিদের অনেক আয়াতে ইহসান ও তাকওয়া একই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ইহসানের একটি সাধারণ অর্থ সদাচার ও সৌজন্য। সৃষ্টির প্রতি দয়া এই অর্থের অন্তর্গত। মানুষের সাথে তো বটেই, প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের সাথেও দয়া ও মমতার আচরণ করতে বলা হয়েছে ইসলামে। নির্বাক পশু ও নিশ্চল গাছপালার প্রতি নির্দয় আচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে ব্যভিচারিণীর মুক্তিলাভ এবং একটি বিড়ালীকে না খাইয়ে মারার কারণে আজাবের উপযোগী হওয়া এক নারীর কথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। আর আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার ও সৌজন্যের শিা শুরু হয়েছে ইসলামের প্রথম যুগেই। যখন শরিয়তের বিস্তারিত বিধানগুলো নাজিল হয়নি, তখন ইসলামের পরিচয় হিসেবে তাওহিদ ও রিসালাতের স্বীকৃতির সাথে উল্লেখ করা হতো মানুষের সাথে সদাচার ও সৌজন্যের আচরণের কথা। এ প্রসঙ্গে হজরত আমর ইবনে আবাসা নামে ইসলামের প্রাথমিক যুগের এক সাহাবীর বর্ণনা বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তিনি যখন মুসলমান হন, তখন আল্লাহর নবীর অনুসারীর সংখ্যা ছয়-সাত জনের বেশি হয়নি। তিনি ইসলামের পরিচয় জানতে চাইলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলাম মানুষকে উন্নত নৈতিকতা ও আদর্শ শিা দেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো। যে তোমার প্রতি জুলুম করে তুমি তাকে মা করো। আর যে তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে তুমি তার সাথে সদাচার করো। এই শেষের বিষয়টি অর্থাৎ কেউ অন্যায় আচরণ করলেও তার সাথে সদাচার করার নাম হাদিসে ইহসান বলা হয়েছে। এই গুণ অর্জন করতে পারা সহজ নয়। কিন্তু যারা পারেন, তাদেরকে খাঁটি মুমিন বলা হয়েছে হাদিসে। ইহসানের আরেকটি অর্থ পাওয়া যায় হাদিসে জিবরাইল থেকে। নবুওয়াতি জিন্দেগির শেষ প্রান্তে এসে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন ণস্থায়ী পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন একদিন মানুষের আকৃতিতে হাজির হয়েছিলেন অহির বাহক হজরত জিবরাইল আলায়হিস সালাম। তিনি বেশ কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। আর হজরত নবী করীম সা: সেগুলোর জবাব দিয়েছিলেন। ঈমান, ইসলাম, ইহসান, কিয়ামত ইত্যাদি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রাসূল সা: যা বলেছিলেন তা যেমন পূর্ণাঙ্গ, তেমনি অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক অর্থবোধক। ইহসান সম্পর্কে বলুনÑ হজরত জিবরাইলের এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলে করীম সা: ইরশাদ করেছিলেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখছ। যদি তুমি তাকে দেখছ বলে ভাবতে না পার, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন। (বুখারি ও মুসলিম শরিফ) হাদিসের এ অংশ থেকে আধ্যাত্ম সাধনার মনীষীরা তাসাওউফের দু’টি পরিভাষা উদ্ভাবন করেছেনÑ মাকামে মুশাহাদা ও মাকামে মুরাকাবা। আল্লাহ তায়ালাকে সব সময় সামনে উপস্থিত বলে ভাবতে পারা এবং সেই মানসিকতা নিয়ে ইবাদত বন্দেগি করা মাকামে মুশাহাদা। আর আল্লাহ তায়ালা আমাকে প্রত্য করছেন এমন ভয়ার্ত মনোভাব নিয়ে ইবাদত বন্দেগি করার নাম মাকামে মুরাকাবা। দ্বিতীয়টির তুলনায় প্রথমটি যে উন্নত তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। সারকথা, আল্লাহ তায়ালাকে সব সময় হাজির নাজির জানাই ইহসান। এটাকেই ইখলাস বলে বর্ণনা করা হয়। সুতরাং যারা মুখলিস অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কাজ করেন, তারা আল্লাহর বিশেষ রহমতের উপযুক্ত হন। ইখলাসের গুণ অর্জন রমজানে সিয়াম সাধনার অন্যতম সার্থকতা
বিশেষ রহমত নাজিলের মাস রমজান
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমত লাভের মাস রমজানুল মোবারকের আজ ১৪ তারিখ। সৃষ্টিকুলের প্রতি সর্বণ আল্লাহর অশেষ রহমত বর্ষিত হতে থাকে। নইলে জগৎ টিকে থাকতে পারত না। আর মানুষের ব্যাপারে এ নিয়ম আরো সত্য। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছেÑ তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকলে তোমরা অবশ্যই বিপন্ন হতে। (সূরা বাকারা, আয়াত-৬৪) মানুষ প্রতিনিয়ত আল্লাহর নাফরমানি করে। তবুও দুনিয়াবি জীবনে মানুষের রিজিক বন্ধ না করাই আল্লাহর নিয়ম। এটা পরীার জায়গা। শত অন্যায় করলেও পার্থিব জীবনোপকরণ সরবরাহ করা হতে থাকবে। এই সাধারণ রহমত থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না। শুধু পৃথিবীতে নয়, কেয়ামতের ময়দানেও সবার প্রতি রহমত করতে চাইবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কিন্তু যারা আল্লাহর নাফরমানি করেছে তাদেরকে শাস্তি দেয়াও ইনসাফের দাবি। দুনিয়াতে আল্লাহর বিশেষ রহমতের ভাগী হওয়ার জন্য শর্ত রয়েছে। কুরআন মজিদে সূরা আরাফের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত মুহসিনদের নিকটবর্তী। এখানে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অসীম দয়ালু প্রভুর বিশেষ রহমত লাভ করতে হলে মুহসিন বা ইহসানকারী হতে হবে। কুরআন মজিদের অনেক আয়াতে ইহসান ও তাকওয়া একই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ইহসানের একটি সাধারণ অর্থ সদাচার ও সৌজন্য। সৃষ্টির প্রতি দয়া এই অর্থের অন্তর্গত। মানুষের সাথে তো বটেই, প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের সাথেও দয়া ও মমতার আচরণ করতে বলা হয়েছে ইসলামে। নির্বাক পশু ও নিশ্চল গাছপালার প্রতি নির্দয় আচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে ব্যভিচারিণীর মুক্তিলাভ এবং একটি বিড়ালীকে না খাইয়ে মারার কারণে আজাবের উপযোগী হওয়া এক নারীর কথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। আর আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার ও সৌজন্যের শিা শুরু হয়েছে ইসলামের প্রথম যুগেই। যখন শরিয়তের বিস্তারিত বিধানগুলো নাজিল হয়নি, তখন ইসলামের পরিচয় হিসেবে তাওহিদ ও রিসালাতের স্বীকৃতির সাথে উল্লেখ করা হতো মানুষের সাথে সদাচার ও সৌজন্যের আচরণের কথা। এ প্রসঙ্গে হজরত আমর ইবনে আবাসা নামে ইসলামের প্রাথমিক যুগের এক সাহাবীর বর্ণনা বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তিনি যখন মুসলমান হন, তখন আল্লাহর নবীর অনুসারীর সংখ্যা ছয়-সাত জনের বেশি হয়নি। তিনি ইসলামের পরিচয় জানতে চাইলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলাম মানুষকে উন্নত নৈতিকতা ও আদর্শ শিা দেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো। যে তোমার প্রতি জুলুম করে তুমি তাকে মা করো। আর যে তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে তুমি তার সাথে সদাচার করো। এই শেষের বিষয়টি অর্থাৎ কেউ অন্যায় আচরণ করলেও তার সাথে সদাচার করার নাম হাদিসে ইহসান বলা হয়েছে। এই গুণ অর্জন করতে পারা সহজ নয়। কিন্তু যারা পারেন, তাদেরকে খাঁটি মুমিন বলা হয়েছে হাদিসে। ইহসানের আরেকটি অর্থ পাওয়া যায় হাদিসে জিবরাইল থেকে। নবুওয়াতি জিন্দেগির শেষ প্রান্তে এসে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন ণস্থায়ী পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন একদিন মানুষের আকৃতিতে হাজির হয়েছিলেন অহির বাহক হজরত জিবরাইল আলায়হিস সালাম। তিনি বেশ কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। আর হজরত নবী করীম সা: সেগুলোর জবাব দিয়েছিলেন। ঈমান, ইসলাম, ইহসান, কিয়ামত ইত্যাদি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রাসূল সা: যা বলেছিলেন তা যেমন পূর্ণাঙ্গ, তেমনি অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক অর্থবোধক। ইহসান সম্পর্কে বলুনÑ হজরত জিবরাইলের এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলে করীম সা: ইরশাদ করেছিলেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখছ। যদি তুমি তাকে দেখছ বলে ভাবতে না পার, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন। (বুখারি ও মুসলিম শরিফ) হাদিসের এ অংশ থেকে আধ্যাত্ম সাধনার মনীষীরা তাসাওউফের দু’টি পরিভাষা উদ্ভাবন করেছেনÑ মাকামে মুশাহাদা ও মাকামে মুরাকাবা। আল্লাহ তায়ালাকে সব সময় সামনে উপস্থিত বলে ভাবতে পারা এবং সেই মানসিকতা নিয়ে ইবাদত বন্দেগি করা মাকামে মুশাহাদা। আর আল্লাহ তায়ালা আমাকে প্রত্য করছেন এমন ভয়ার্ত মনোভাব নিয়ে ইবাদত বন্দেগি করার নাম মাকামে মুরাকাবা। দ্বিতীয়টির তুলনায় প্রথমটি যে উন্নত তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। সারকথা, আল্লাহ তায়ালাকে সব সময় হাজির নাজির জানাই ইহসান। এটাকেই ইখলাস বলে বর্ণনা করা হয়। সুতরাং যারা মুখলিস অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কাজ করেন, তারা আল্লাহর বিশেষ রহমতের উপযুক্ত হন। ইখলাসের গুণ অর্জন রমজানে সিয়াম সাধনার অন্যতম সার্থকতা